আন্তর্জাতিক
বেন-গুরিয়নে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, কী ভাবছে ইসরাইল?

অতি সম্প্রতি ইসরাইলের বিভিন্ন সামরিক ও বিমানঘাঁটিতে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে হুথি (আনসারুল্লাহ) নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের সামরিক বাহিনী। যার সর্বশেষ হামলাটি প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়েছে ইসরাইলের শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
ফলে সেটি দখলকৃত তেলআবিবে দখলদার ইসরাইলের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বেন গুরিয়নে সরাসরি আঘাত হানে। এতে বেশ কয়েকজন আহতসহ বিমানবন্দরের সব ধরনের ফ্লাইট স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ইয়েমেনি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর দখলদার ইসরাইল সরকার তার বর্তমান ইয়েমেন-নীতি পুনর্বিবেচনা করছে এবং এ ধরনের হামলার সরাসরি জবাব দেওয়ার কথা ভাবছে বলে রোববার জেরুজালেম পোস্টকে জানিয়েছে এক ইসরাইলি সূত্র।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাইডেন প্রশাসনের সময় ২০২৪ সালের জুলাই থেকে শুরু করে অন্তত পাঁচবার ইয়েমেনে হুথি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের পর তার অনুরোধে ইসরাইল (হুথিদের পুনরায় হামলা শুরু করার পরও) ইয়েমেনের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা থেকে বিরত থাকে।
যদিও এই সময়ে হামলা চালানোর দায়িত্ব পালন করে মার্কিন যুদ্ধবিমান। বেশ কয়েক দফার হামলা চালিয়ে নারী-শিশুসহ প্রায় সাড়ে ৪শ ইয়েমেনিকে হত্যা করে মার্কিন বাহিনী।
তবে এবার বেন গুরিয়নে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সরাসরি জবাব দিতে চায় ইসরাইল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইতোমধ্যেই ইয়েমেন থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাব নিয়ে আলোচনার জন্য মন্ত্রিসভা ও জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি সীমিত পরিসরের বৈঠকে বসেছেন।
প্রতিরক্ষা সূত্র জেরুজালেম পোস্টকে জানিয়েছে, হুথিদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। তবে তা কবে ও কখন, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
চলতি ট্রাম্প প্রশাসনের শুরু থেকেই ইসরাইলের ইয়েমেন নীতিতে সাময়িক পরিবর্তন আনা হয়। যাতে ইসরাইলের অংশগ্রহণ ছাড়াই তিনি হুথি সমস্যার মোকাবিলা করতে পারেন। কিন্তু এখন বেন-গুরিয়ন বিমানবন্দরে হামলার পর সেই নীতি পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে।
রোববার সকালে বেন-গুরিয়ন বিমানবন্দরে সর্বশেষ হামলার পর ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ বলেন, ‘যে আমাদের ক্ষতি করবে, তাকে সাতগুণ জবাব দেওয়া হবে’।
এদিকে বেন-গুরিয়ন বিমানবন্দরের টার্মিনাল ৩ এলাকার কাছে ইয়েমেনি ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বস্ত হলে অন্তত ৬ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
আইডিএফ সূত্র জানিয়েছে, এটি সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত ছিল, নাকি ক্ষেপণাস্ত্রের টুকরো পড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
এদিকে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর রেডিও স্বীকার করে বলেছে, ক্ষেপণাস্ত্রটি ভূপাতিত করা যায়নি। যদিও একাধিকবার প্রতিরোধের চেষ্টা করা হয়েছিল।
কেন প্রতিহত করা যায়নি?
আঞ্চলিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইয়েমেন যদি সত্যিই হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরাইলের অভ্যন্তরে আঘাত হানে, তাহলে তা এক নতুন সামরিক বাস্তবতার সূচনা করবে।
তাদের মতে, ইসরাইলের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যেমন ‘আয়রন ডোম’, ‘ডেভিড’স স্লিং’ বা ‘অ্যারো’ প্রযুক্তি সাধারণত সাবসনিক বা সুপারসনিক গতির ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে সক্ষম। কিন্তু হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা এখনো অনেক দেশের জন্যই কঠিন।
তাই ইসরাইলি বাহিনীও ইয়েমেনের এই হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম হয়নি।