অপরাধ
গাজায় আসলে কতসংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে?

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কত মানুষ মারা গেছেন, তা নিয়ে তীব্র বিতর্ক রয়েছে। যেহেতু যুদ্ধটি এখনো শেষ হয়নি, তাই মৃতের সংখ্যা গণনা করা আসলেই কঠিন। তবে বিশেষজ্ঞরা চেষ্টা করছেন প্রকৃত সংখ্যা নিরূপনের। নতুন একটি গবেষণা বলছে, মৃতের সংখ্যা যত বলা হচ্ছে, তার চেয়ে অনেক কম হতে পারে।
গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর মাঝে মাঝে থেমে থেমে হামলা চালালেও গত ৭১ দিন ধরে একটানা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে। আজ সোমবারও জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের ফাতিমা বিনতে আসাদ স্কুলে হামলা চালিয়ে শিশুসহ ১৫ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। ফলে প্রতিদিনের মৃতের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ করা আসলেই কঠিন।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকেও নিহতের প্রকৃত সংখ্যা জানানো হয় না। শুধু হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ফিলিস্তিনি নিহতের বিস্তারিত তথ্য দেয়। ফলে একপাক্ষিক পরিসংখ্যান নিয়ে সন্দেহ তৈরি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের সংখ্যা বাড়িয়ে দেখানোর এক ধরনের প্রবণতা রয়েছে হামাসের।
তবে অতীতে ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংঘাত শেষ হওয়ার পর দেখা যেত, নিহতের সংখ্যা নিয়ে ইসরায়েল ও জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য প্রায় কাছাকাছি।
এবারের ইসরায়েল ও গাজার সংঘাত আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক ব্যাপক ও দীর্ঘস্থায়ী। গাজার হাসপাতালসহ মৃতের সংখ্যা গণনাকারী অনেক প্রতিষ্ঠানই ইসরায়েল গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ৫ মে পর্যন্ত গাজাযুদ্ধে ৫২ হাজার ৬১৫ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে কতজন বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন আর কতজন হামাস যোদ্ধা রয়েছেন, তা তারা আলাদাভাবে উল্লেখ করেনি। গত জানুয়ারিতে ইসরায়েল বলেছিল, নিহতদের মধ্যে ২০ হাজার হামাস যোদ্ধা রয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা দুটি উৎস থেকে মৃতের তথ্য নিয়ে থাকে। একটি হচ্ছে, হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য এবং আরেকটি হচ্ছে, অনলাইনে বিভিন্ন মানুষের দেওয়া মৃতের তথ্য।
লন্ডনভিত্তিক চিকিৎসাবিজ্ঞান সাময়িকী ল্যানসেট সম্প্রতি একটি গবেষণায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুটি উৎসের তালিকার পাশাপাশি তৃতীয় আরেকটি তালিকা পরীক্ষা করেছেন। সেটি হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত শোক সংবাদ থেকে পাওয়া বিস্তারিত তথ্য। তিনটি তালিকাতেই মৃতদের নাম, বয়স ও লিঙ্গ অন্তর্ভুক্ত ছিল। কারও কারও আইডি নম্বরও ছিল। স্বাধীন তদন্তকারীরা নিশ্চিত করেছেন যে, মন্ত্রণালয়ের দুটি তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা প্রায় নিশ্চিতভাবে মারা গেছেন।
গবেষকরা মন্ত্রণালয়ের সরকারি মৃতের সংখ্যা উপেক্ষা করেছেন। এর পরিবর্তে তাঁরা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য গ্রহণ করেছেন এবং তিনটি তালিকার মধ্যে সামঞ্জস্য পরীক্ষা করেছেন।
গবেষকেরা বলছেন, তালিকাগুলোর মধ্যে মৃতের সংখ্যা নিয়ে মিল খুবই কম, ববং মৃতের প্রকৃত সংখ্যা সরকারি মন্ত্রণালয়ের সংখ্যার চেয়ে ৪৬–১০৭ শতাংশ পর্যন্ত বেশি দেখানো হয়েছে।
নিহতের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে বিপুল অনিশ্চয়তা এখনো রয়েছে। তালিকাগুলোতেও ভুল থাকা অস্বাভাবিক নয়। যুদ্ধের একেবারে শুরুর দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুটি তালিকার একটিতে ৩ হাজার ৯৫২ জন নিহতের নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা পরবর্তীতে বাদ দিয়েছে তারা।
আবার কোনো কোনো গবেষকের মতে, হামাসের তরুণ যোদ্ধাদের নাম তালিকাগুলোতে নাও থাকতে পারে। কারণ হামাস তাদের নিজস্ব ক্ষয়ক্ষতি কম দেখাতে চাইতে পারে। সেক্ষেত্রে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হবে। কত মানুষ যে শুধু চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে, তার কোনো হিসাব নেই। সংখ্যাটি সম্ভবত হাজার হাজার হবে।
সুতরাং গাজা যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কত জন মানুষ মারা গেছে, তার প্রকৃত সংখ্যা জানা সত্যিই কঠিন। এমনকি যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেও এর প্রকৃত সংখ্যা সম্ভবত অজানাই থেকে যাবে।