“কারো অবদান অস্বীকার মানেই ইতিহাস বিকৃতি” — মাহফুজ আলম - Porikroma News
Connect with us

জাতীয়

“কারো অবদান অস্বীকার মানেই ইতিহাস বিকৃতি” — মাহফুজ আলম

Published

on

ইশতিয়াক আহমদ মাসুমঃ “জুলাই কারো একার নয়, এটা আমাদের সবার” — এমন একটি রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক বার্তায় কেঁপে উঠেছে সামাজিক মাধ্যম ও রাজনৈতিক অঙ্গন। অন্তর্বর্তী সরকারের ছাত্র ও সামাজিক শক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেলে নিজের অফিশিয়াল প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রকাশিত এক পোস্টে এ বক্তব্য দেন। ওই পোস্টে তিনি সতর্ক করে বলেন, দলীয় বা আদর্শিক বিরোধ থাকতেই পারে, কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের সময়ে যে যার অবস্থান থেকে যে ভূমিকা রেখেছে, তা অস্বীকার করা মানে হচ্ছে ইতিহাস বিকৃত করা এবং জনগণের সংগ্রামকে অবমূল্যায়ন করা।

মাহফুজ আলমের বক্তব্যে অভ্যুত্থানকে ‘সর্বজনীন প্রতিরোধ’ বলে উল্লেখ করে একে রীতিমতো জাতিগত ও গণমানসিকতার রূপান্তর বলে অভিহিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, “এখানে শিবির ভূমিকা রেখেছে তাদের জনশক্তি ও সাংগঠনিক দক্ষতা দিয়ে। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে শিবিরের কর্মীরা অভ্যুত্থানকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, ক্ষেত্রবিশেষে নেতৃত্বও দিয়েছেন।” এর মাধ্যমে তিনি একসময়ে বিতর্কিত রাজনৈতিক শক্তিকেও স্বীকার করে নেয়ার সাহস দেখিয়েছেন।

ছাত্রদলের অবদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রদলের কর্মীরা ফ্যাসিস্ট বাহিনীর বিরুদ্ধে কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। তারা শুধু বয়ান দেয়নি, তারা মাঠে লড়াই করেছে, তৃণমূল পর্যায়ে সংঘবদ্ধ প্রতিরোধে নেতৃত্ব দিয়েছে।” ছাত্রশক্তির ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, “ছাত্রশক্তি শুধু মাঠে না, সামনে থেকেছে সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে। তারা আস্থা তৈরি করতে পেরেছে জনগণের মধ্যে।”

ছাত্র অধিকার পরিষদের সংগ্রামকে ‘ধারাবাহিকতা’র প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেন মাহফুজ আলম। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থানে তাদের লড়াই ছিল ধারাবাহিক ও বহুমাত্রিক। একইসাথে ছাত্র ইউনিয়নের একটি অংশ, ছাত্র ফেডারেশন এবং অন্যান্য বাম ছাত্র সংগঠনের ভূমিকা তুলে ধরেন তিনি। “বামপন্থী সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো মাঠে নেমে, সাহসের বয়ান তৈরি করেছে এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না,” তিনি যোগ করেন।

উপদেষ্টা মাহফুজ আলম আলেম ও মাদ্রাসা ছাত্রদের ভূমিকাকেও গুরুত্ব দিয়ে বলেন, “যাত্রাবাড়ী তার উজ্জ্বল উদাহরণ। আলেম ও ছাত্ররা একত্রিত হয়ে যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, তা ছিল অবিস্মরণীয়।” পাশাপাশি তিনি শ্রমজীবী মানুষ, রিকশাচালক, প্রাইভেটের শিক্ষার্থী, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের সাহসী ভূমিকা তুলে ধরেন, যারা কার্ফিউর মাঝেও প্রতিরোধ স্পটে থেকে যুদ্ধ করেছেন।

নারী-অভিভাবকদের ভূমিকাকেও মাহফুজ আলম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি লেখেন, “মায়েরা, বোনেরা রাস্তায় নেমে আহতদের সহযোগিতা করেছেন। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নেতৃত্ব দিয়েছে অনেক স্পটে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, এমনকি ছাত্রলীগের বিদ্রোহী অংশের অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।

তাঁর পোস্টে বিশেষভাবে উঠে আসে নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণির অংশগ্রহণ এবং পেশাজীবী সংগঠন ও মিডিয়া কর্মীদের একাত্মতা, যারা জুলাইয়ের শেষদিকে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে অভ্যুত্থানকে জনজাগরণে রূপ দিয়েছেন। প্রবাসী শ্রমিক, চাকুরে ও প্রফেশনালদের ভূমিকাও আলাদা করে উল্লেখ করেন তিনি যাঁরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করেও বাংলাদেশের লড়াইকে বৈশ্বিক পর্যায়ে তুলে ধরেছেন।

সবশেষে মাহফুজ আলম বলেন, “কবি, সাহিত্যিক, পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল, সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সার, এমনকি র‍্যাপাররাও এই আন্দোলনের অংশ হয়েছেন। তাদের সৃষ্টিতে জনগণ সাহস পেয়েছে। তাই প্রশ্ন হলো আপনি কার অবদান অস্বীকার করবেন?”

Share

ইশতিয়াক আহমদ মাসুমঃ “জুলাই কারো একার নয়, এটা আমাদের সবার” — এমন একটি রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক বার্তায় কেঁপে উঠেছে সামাজিক মাধ্যম ও রাজনৈতিক অঙ্গন। অন্তর্বর্তী সরকারের ছাত্র ও সামাজিক শক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেলে নিজের অফিশিয়াল প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রকাশিত এক পোস্টে এ বক্তব্য দেন। ওই পোস্টে তিনি সতর্ক করে বলেন, দলীয় বা আদর্শিক বিরোধ থাকতেই পারে, কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের সময়ে যে যার অবস্থান থেকে যে ভূমিকা রেখেছে, তা অস্বীকার করা মানে হচ্ছে ইতিহাস বিকৃত করা এবং জনগণের সংগ্রামকে অবমূল্যায়ন করা।

মাহফুজ আলমের বক্তব্যে অভ্যুত্থানকে ‘সর্বজনীন প্রতিরোধ’ বলে উল্লেখ করে একে রীতিমতো জাতিগত ও গণমানসিকতার রূপান্তর বলে অভিহিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, “এখানে শিবির ভূমিকা রেখেছে তাদের জনশক্তি ও সাংগঠনিক দক্ষতা দিয়ে। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে শিবিরের কর্মীরা অভ্যুত্থানকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, ক্ষেত্রবিশেষে নেতৃত্বও দিয়েছেন।” এর মাধ্যমে তিনি একসময়ে বিতর্কিত রাজনৈতিক শক্তিকেও স্বীকার করে নেয়ার সাহস দেখিয়েছেন।

ছাত্রদলের অবদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রদলের কর্মীরা ফ্যাসিস্ট বাহিনীর বিরুদ্ধে কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। তারা শুধু বয়ান দেয়নি, তারা মাঠে লড়াই করেছে, তৃণমূল পর্যায়ে সংঘবদ্ধ প্রতিরোধে নেতৃত্ব দিয়েছে।” ছাত্রশক্তির ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, “ছাত্রশক্তি শুধু মাঠে না, সামনে থেকেছে সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে। তারা আস্থা তৈরি করতে পেরেছে জনগণের মধ্যে।”

ছাত্র অধিকার পরিষদের সংগ্রামকে ‘ধারাবাহিকতা’র প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেন মাহফুজ আলম। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থানে তাদের লড়াই ছিল ধারাবাহিক ও বহুমাত্রিক। একইসাথে ছাত্র ইউনিয়নের একটি অংশ, ছাত্র ফেডারেশন এবং অন্যান্য বাম ছাত্র সংগঠনের ভূমিকা তুলে ধরেন তিনি। “বামপন্থী সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো মাঠে নেমে, সাহসের বয়ান তৈরি করেছে এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না,” তিনি যোগ করেন।

উপদেষ্টা মাহফুজ আলম আলেম ও মাদ্রাসা ছাত্রদের ভূমিকাকেও গুরুত্ব দিয়ে বলেন, “যাত্রাবাড়ী তার উজ্জ্বল উদাহরণ। আলেম ও ছাত্ররা একত্রিত হয়ে যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, তা ছিল অবিস্মরণীয়।” পাশাপাশি তিনি শ্রমজীবী মানুষ, রিকশাচালক, প্রাইভেটের শিক্ষার্থী, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের সাহসী ভূমিকা তুলে ধরেন, যারা কার্ফিউর মাঝেও প্রতিরোধ স্পটে থেকে যুদ্ধ করেছেন।

নারী-অভিভাবকদের ভূমিকাকেও মাহফুজ আলম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি লেখেন, “মায়েরা, বোনেরা রাস্তায় নেমে আহতদের সহযোগিতা করেছেন। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নেতৃত্ব দিয়েছে অনেক স্পটে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, এমনকি ছাত্রলীগের বিদ্রোহী অংশের অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।

তাঁর পোস্টে বিশেষভাবে উঠে আসে নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণির অংশগ্রহণ এবং পেশাজীবী সংগঠন ও মিডিয়া কর্মীদের একাত্মতা, যারা জুলাইয়ের শেষদিকে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে অভ্যুত্থানকে জনজাগরণে রূপ দিয়েছেন। প্রবাসী শ্রমিক, চাকুরে ও প্রফেশনালদের ভূমিকাও আলাদা করে উল্লেখ করেন তিনি যাঁরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করেও বাংলাদেশের লড়াইকে বৈশ্বিক পর্যায়ে তুলে ধরেছেন।

সবশেষে মাহফুজ আলম বলেন, “কবি, সাহিত্যিক, পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল, সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সার, এমনকি র‍্যাপাররাও এই আন্দোলনের অংশ হয়েছেন। তাদের সৃষ্টিতে জনগণ সাহস পেয়েছে। তাই প্রশ্ন হলো আপনি কার অবদান অস্বীকার করবেন?”

Share