Connect with us

বাংলাদেশ

ভিক্ষা করেন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মেলে না স্বামীর ভাতা

Published

on

ভিক্ষা করেন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মেলে না স্বামীর ভাতা

কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভিক্ষাবৃত্তি করে দিন কাটাচ্ছেন জোবেদা বেগম নামে এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী। সরকারি গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁর স্বামীর নামে দেওয়া ভাতা সুবিধা পাচ্ছেন না তিনি। অভিযোগ উঠেছে, জালিয়াতির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা সেজে জোবেদার স্বামীর ভাতা তুলে নিচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত এক সরকারি কর্মকর্তা। 
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটেছে উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের অনন্তপুর এলাকায়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধার ছেলে আব্দুল জব্বার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। 
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ১৯৭১ সালে জোবেদা বেগমের স্বামী মফিজুল ইসলাম ভারতের মুজিব ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তাঁর ভারতীয় তালিকা নম্বর ৩৯৭০৩। প্রশিক্ষণ শেষে ৬ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধে অংশ নেন মফিজুল। দেশ স্বাধীনের পরপরই তাঁকে নীলফামারীতে শেষবারের মতো দেখেছিলেন মুজিব ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেওয়া সহযোদ্ধারা। এরপর আর তিনি বাড়িতে ফিরে আসেননি। ধারণা করা হয়, তিনি মারা গেছেন। 


অভিযোগ উঠেছে, মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল ইসলামের বাড়িতে ফিরে না আসার সুযোগ নেন উত্তর দলদলিয়া ইউনিয়নের কুটিপাড়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম। 
আব্দুল জব্বার জানান, তাঁর বাবার ভারতীয় তালিকার ৩৯৭০৩ নম্বর ব্যবহার করে নিয়মিত ভাতা তুলছেন মফিজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। বিষয়টি তিনি জানতে পারেন তাঁর বাবার সঙ্গে ভারতে ট্রেনিং নেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের মাধ্যমে। এরপর তিনি ২০২৩ সালে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। তৎকালীন উলিপুর ইউএনওর নির্দেশে বিষয়টি তদন্ত করেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা। কিন্তু সমাজসেবা কর্মকতা সে সময় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা দলদলিয়া ইউনিয়নের কুটিরপাড়া গ্রামের মফিজুল ইসলামের পক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন দেন। 
আব্দুল জব্বার জানান, ঠেলাগাড়ি চালিয়ে সন্তানদের নিয়ে কোনো রকমে তাদের দিন কাটছে। অনটনের সংসারে তাঁর মা আজও বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করেন। তিনি অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।
উলিপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ, একই নাম ও বাবার নাম মিলে যাওয়ায় এবং দীর্ঘ সময় মুক্তিযোদ্ধার দাবিদার থাকার সুযোগ নিয়েছেন মফিজুল ইসলাম নামে অবসরপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা। ভারতীয় তালিকার ঠিকানা অনুযায়ী অনন্তপুর হাতিয়া ইউনিয়নের মফিজুল ইসলাম প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। অন্য ইউনিয়নের কেউ ভারতীয় তালিকার ওই নম্বর ব্যবহার করতে পারেন না। 


ভারতে মুজিব ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেওয়া চার মুক্তিযোদ্ধাও মফিজুল ইসলামের স্ত্রী ও সন্তানের পক্ষে সমকালকে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল বাতেন সরকার, (ভারতীয় তালিকা নম্বর ৩৯৬৮১), বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর মোহাম্মদ (ভারতীয় তালিকা নম্বর ৩৯৬৮২), বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রবিউল ইসলাম, (পরিচিতি নম্বর ০১৪৯০০০১৭৯৯) ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সুবল চন্দ্র রায় (ভারতীয় তালিকা নম্বর ৩৯৪৭৯)। তারা সবাই উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের বাসিন্দা। তারা বিষয়টির সঠিক তদন্ত দাবি করেন। 
অভিযোগ অস্বীকার করে মফিজুল ইসলাম বলেন, তিনি ২০১০ সালে সরকারি গেজেটভুক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা ভোগ করে আসছেন। ২০২৩ সালে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী দাবিদার জোবেদা বেগম নামে একজন তাঁকে ভুয়া প্রমাণ করতে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তিনি সঠিক মুক্তিযোদ্ধা বলে সমাজসেবা কর্মকর্তা প্রতিবেদন দিয়েছেন। 
তদন্ত কর্মকর্তা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান বলেন, তিনি কাগজপত্র ও ভাতাভোগী মফিজুল ইসলামের সাক্ষীদের সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছিলেন। তদন্তের সময় জোবেদার পক্ষে কেউ সাক্ষ্য দেয়নি।  
উলিপুরের ইউএনও নয়ন কুমার সাহা বলেন, অভিযোগের বিষয়টি তিনি জেনেছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা খুঁজে বের করা হবে। 
 

Share

কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভিক্ষাবৃত্তি করে দিন কাটাচ্ছেন জোবেদা বেগম নামে এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী। সরকারি গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁর স্বামীর নামে দেওয়া ভাতা সুবিধা পাচ্ছেন না তিনি। অভিযোগ উঠেছে, জালিয়াতির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা সেজে জোবেদার স্বামীর ভাতা তুলে নিচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত এক সরকারি কর্মকর্তা। 
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটেছে উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের অনন্তপুর এলাকায়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধার ছেলে আব্দুল জব্বার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। 
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ১৯৭১ সালে জোবেদা বেগমের স্বামী মফিজুল ইসলাম ভারতের মুজিব ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তাঁর ভারতীয় তালিকা নম্বর ৩৯৭০৩। প্রশিক্ষণ শেষে ৬ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধে অংশ নেন মফিজুল। দেশ স্বাধীনের পরপরই তাঁকে নীলফামারীতে শেষবারের মতো দেখেছিলেন মুজিব ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেওয়া সহযোদ্ধারা। এরপর আর তিনি বাড়িতে ফিরে আসেননি। ধারণা করা হয়, তিনি মারা গেছেন। 


অভিযোগ উঠেছে, মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল ইসলামের বাড়িতে ফিরে না আসার সুযোগ নেন উত্তর দলদলিয়া ইউনিয়নের কুটিপাড়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম। 
আব্দুল জব্বার জানান, তাঁর বাবার ভারতীয় তালিকার ৩৯৭০৩ নম্বর ব্যবহার করে নিয়মিত ভাতা তুলছেন মফিজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। বিষয়টি তিনি জানতে পারেন তাঁর বাবার সঙ্গে ভারতে ট্রেনিং নেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের মাধ্যমে। এরপর তিনি ২০২৩ সালে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। তৎকালীন উলিপুর ইউএনওর নির্দেশে বিষয়টি তদন্ত করেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা। কিন্তু সমাজসেবা কর্মকতা সে সময় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা দলদলিয়া ইউনিয়নের কুটিরপাড়া গ্রামের মফিজুল ইসলামের পক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন দেন। 
আব্দুল জব্বার জানান, ঠেলাগাড়ি চালিয়ে সন্তানদের নিয়ে কোনো রকমে তাদের দিন কাটছে। অনটনের সংসারে তাঁর মা আজও বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করেন। তিনি অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।
উলিপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ, একই নাম ও বাবার নাম মিলে যাওয়ায় এবং দীর্ঘ সময় মুক্তিযোদ্ধার দাবিদার থাকার সুযোগ নিয়েছেন মফিজুল ইসলাম নামে অবসরপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা। ভারতীয় তালিকার ঠিকানা অনুযায়ী অনন্তপুর হাতিয়া ইউনিয়নের মফিজুল ইসলাম প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। অন্য ইউনিয়নের কেউ ভারতীয় তালিকার ওই নম্বর ব্যবহার করতে পারেন না। 


ভারতে মুজিব ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেওয়া চার মুক্তিযোদ্ধাও মফিজুল ইসলামের স্ত্রী ও সন্তানের পক্ষে সমকালকে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল বাতেন সরকার, (ভারতীয় তালিকা নম্বর ৩৯৬৮১), বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর মোহাম্মদ (ভারতীয় তালিকা নম্বর ৩৯৬৮২), বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রবিউল ইসলাম, (পরিচিতি নম্বর ০১৪৯০০০১৭৯৯) ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সুবল চন্দ্র রায় (ভারতীয় তালিকা নম্বর ৩৯৪৭৯)। তারা সবাই উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের বাসিন্দা। তারা বিষয়টির সঠিক তদন্ত দাবি করেন। 
অভিযোগ অস্বীকার করে মফিজুল ইসলাম বলেন, তিনি ২০১০ সালে সরকারি গেজেটভুক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা ভোগ করে আসছেন। ২০২৩ সালে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী দাবিদার জোবেদা বেগম নামে একজন তাঁকে ভুয়া প্রমাণ করতে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তিনি সঠিক মুক্তিযোদ্ধা বলে সমাজসেবা কর্মকর্তা প্রতিবেদন দিয়েছেন। 
তদন্ত কর্মকর্তা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান বলেন, তিনি কাগজপত্র ও ভাতাভোগী মফিজুল ইসলামের সাক্ষীদের সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছিলেন। তদন্তের সময় জোবেদার পক্ষে কেউ সাক্ষ্য দেয়নি।  
উলিপুরের ইউএনও নয়ন কুমার সাহা বলেন, অভিযোগের বিষয়টি তিনি জেনেছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা খুঁজে বের করা হবে। 
 

Share