আন্তর্জাতিক
যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অনিশ্চয়তা ও আতঙ্ক

যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে গভীর অনিশ্চয়তা ও উৎকণ্ঠা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর তার প্রশাসন অভিবাসন ও উচ্চশিক্ষা নীতিতে যেসব কড়াকড়ি পদক্ষেপ নিয়েছে, তা আঘাত করেছে হাজারো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ ও উচ্চশিক্ষার আকাঙ্ক্ষাকে।
দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীরা হঠাৎ নীতিগত পরিবর্তনের আশঙ্কায় আতঙ্কিত। নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড থেকে আসা ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দ্রে ফা’আসো জানান, “ডিগ্রি শেষ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে যাওয়াই আমার অগ্রাধিকার।” তিনি আশঙ্কা করছেন, হঠাৎ করে তার থাকার অধিকার রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হতে পারে।
অন্য শিক্ষার্থীরাও জানিয়েছেন, বৈধ ভিসা থাকা সত্ত্বেও তারা প্রতিবাদ-সমাবেশ এড়িয়ে চলেন, সবসময় কাগজপত্র সঙ্গে রাখেন, কিন্তু তবুও আটক হওয়ার ভয়ে ভীত থাকেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তে ভিসা প্রক্রিয়ায় বিলম্ব, আইনগত মর্যাদা বাতিল ও পুনর্বহাল, সোশ্যাল মিডিয়া যাচাই, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, গবেষণা তহবিল কাটছাঁট, এবং বিশেষ করে চীনা ও ইরানি শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি ঠেকানোর চেষ্টাকেও অনেকে রাজনৈতিক প্রতিশোধ বলে অভিহিত করেছেন।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রে ১১ লাখের বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ছিল, যা মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৬ শতাংশ। তবে ২০২৫ সালের মে মাসের এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার আগ্রহ মহামারি-পরবর্তী সময়ে সর্বনিম্নে নেমে গেছে। নাফসা’র বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এ বছর নতুন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০-৪০ শতাংশ কমতে পারে, সামগ্রিক ভর্তি হার ১৫ শতাংশ কমার আশঙ্কা রয়েছে।
এ পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য বড় আর্থিক সংকট ডেকে আনতে পারে, কারণ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা দেশীয় শিক্ষার্থীদের তুলনায় দুই থেকে তিনগুণ বেশি টিউশন ফি প্রদান করে থাকে এবং প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে প্রায় ৪৩ বিলিয়ন ডলার অবদান রাখে।
বিশেষ করে ইরানি শিক্ষার্থীদের ওপর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে। অনেকে ভিসা না পাওয়ায় ভর্তি স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছেন। কলম্বিয়া ও ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশিপ পাওয়া সত্ত্বেও অনেকেই নিষেধাজ্ঞার কারণে ভর্তি হতে পারেননি। ফলে হতাশ হয়ে কেউ কেউ কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে ঝুঁকছেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা শুধু তাদের সম্ভাবনা দিয়ে বিচার চান, জাতীয়তার কারণে নয়।