আন্তর্জাতিক
কাতারে মার্কিন নাগরিকদের লুকিয়ে থাকতে বলল আমেরিকা

ইরান-ইসরায়েলের এক সপ্তাহ ধরে চলমান হামলা-পালটা হামলায় উত্তাল হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। ইসরায়েলের সঙ্গে সমন্বয় করে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে কাতারে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের ‘লুকিয়ে থাকার’ পরামর্শ দিয়েছে দোহায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস।
স্থানীয় সময় রোববার (২২ জুন) দূতাবাসটি এক সতর্ক বার্তায় জানায়, সতর্কতা হিসেবে আমরা কাতারে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত যেখানে আছেন সেখানেই অবস্থান করতে বলছি। খবর সিএনএনের।
উল্লেখ্য, ওই বার্তায় এই নির্দেশনার পেছনে কোনো নির্দিষ্ট কারণ কিংবা হুমকির বিবরণ দেওয়া হয়নি। দূতাবাসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়, অতিরিক্ত সতর্কতার অংশ হিসেবে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে এই সতর্কতা এসেছে এমন এক সময়, যখন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত গোটা অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি করেছে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র শনিবার মধ্যরাতে ইরানের ৩টি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
এর জেরে ইরান যে মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন ঘাঁটিগুলোর প্রতি পাল্টা পদক্ষেপ নিতে পারে- এমন আশঙ্কা থেকেই কাতারে এই সতর্কতা জারি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগেও, গত সপ্তাহে কাতারে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস তাদের কূটনীতিক ও নাগরিকদের ‘বাড়তি সতর্কতা’ অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছিল।
কাতার দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা মিত্র। দেশটিতে অবস্থিত ‘আল উদেইদ এয়ার বেস’ হলো যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে সর্ববৃহৎ সামরিক ঘাঁটি। এই ঘাঁটি থেকেই যুক্তরাষ্ট্র তাদের আঞ্চলিক বিমান অভিযান এবং নিরাপত্তা তৎপরতার বড় একটি অংশ পরিচালনা করে থাকে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র এই ঘাঁটিতে তাদের সামরিক উপস্থিতি আরও ১০ বছরের জন্য বাড়ানোর গোপন চুক্তি করে কাতারের সঙ্গে। একইসঙ্গে ১৯৯২ সালে স্বাক্ষরিত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তিও সংশোধন করা হয়, যা পারস্পরিক নিরাপত্তা সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সতর্কতা কেবল একটি প্রোটোকলগত সিদ্ধান্ত নয়-বরং এটি মধ্যপ্রাচ্যে চলমান ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার একটি সরাসরি প্রতিফলন। যদিও কাতারে এখনো কোনো সরাসরি হামলার শঙ্কা দেখা দেয়নি, তবে সেখানে অবস্থানরত মার্কিন সামরিক ও কূটনৈতিক স্থাপনাগুলো একটি ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারে বলেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সতর্ক বার্তা কেবল কাতারে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের জন্য নয়, বরং তা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধের বিস্তারের পূর্বাভাস হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।