আন্তর্জাতিক
বিশ্বজুড়ে কতটি ঘাঁটি আছে যুক্তরাষ্ট্রের?

বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের কতটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে? প্রশ্নটির উত্তর শুনলে চোখ কপালে উঠে যেতে পারে আপনার। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্য কোনো দেশ বা সাম্রাজ্য বিশ্বজুড়ে এত সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেনি, যতটি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এক সময় ব্রিটিশ ও ফরাসি সাম্রাজ্য বিশ্বব্যাপী অনেক ঘাঁটি স্থাপন করলেও আজকের যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটির তুলনায় তা খুব সামান্যই। বলতে গেলে, পুরো বিশ্বকেই নিজেদের সামরিক জালে আটকে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।
পলিটিক্যাল অ্যানথ্রোপলজি অব আমেরিকান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডেভিড ভাইন তার ‘বেইজ নেশন’ বইয়ে পৃথিবীজুড়ে স্থাপিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোর একটি হিসাব দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এর পাশাপাশি এই ঘাঁটিগুলোর কারণে কী পরিমাণ অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং মানুষের জীবনহানি হচ্ছে সেটিরও একটি হিসাব নির্ধারণের চেষ্টা করেছেন এই অধ্যাপক। সারাবিশ্বে মার্কিন সামরিক ঘাঁটির বেশিরভাগই স্থাপিত হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। ওই সময় সবাইকে হটিয়ে বিশ্বনেতায় পরিণত হয় আমেরিকা। যুদ্ধে জয়ী শক্তি হিসেবে জাপান ও জার্মানিতে শান্তিরক্ষীর দায়িত্ব পালন করে দেশটি। সেই সময় দেশ দুটিতে শতাধিক মার্কিন ঘাঁটি স্থাপিত হয়।
এ ছাড়া বিভিন্ন দেশে মার্কিন ঘাঁটি প্রতিষ্ঠার কাজ জোরদার করার ক্ষেত্রে কোরীয় উপদ্বীপের যুদ্ধ ও স্নায়ুযুদ্ধের ভূমিকাও মুখ্য ছিল। গত শতকে কমিউনিজম বিস্তারের অজুহাত দেখিয়ে সারাবিশ্বে দ্রুতগতিতে সামরিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করে আমেরিকা। তবে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি বিস্তারের কাজ নাটকীয়ভাবে বাড়ে ২০১১ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে। ‘বেইজ নেশন’ বইয়ের তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর অন্তত ৮০টি দেশে প্রায় ৭৫০টি আমেরিকার সেনাঘাঁটি রয়েছে। যদিও প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলেই ধারণা বিশ্লেষকদের। কারণ মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ পেন্টাগন দেশটির সঠিক সামরিক তথ্য-উপাত্ত কখনোই প্রকাশ করে না।
এ ছাড়া বিশ্বের ১৫৯টি দেশে মার্কিন সেনা উপস্থিতি রয়েছে। মোতায়েন রয়েছে প্রায় ১ লাখ ৭৩ হাজার সেনা। এসব সামরিক ঘাঁটি ও হাজার হাজার সেনা পরিচালনায় যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে, তা বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের মোট ব্যয়ের চেয়েও বেশি।
নিজ ভূখণ্ড ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চসংখ্যক ঘাঁটি রয়েছে অন্যতম প্রধান মিত্র দেশ জাপানে। সূর্যোদয়ের দেশখ্যাত এই ভূখণ্ডটিতে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি রয়েছে ১২০টি। এরপরই রয়েছে ইউরোপের দেশ জার্মানি। সেখানে মোট ১১৯টি মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে। ৭৩টি মার্কিন ঘাঁটির জায়গা দিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের আরেক মিত্র দক্ষিণ কোরিয়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার ৭০ বছর পরও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের এখনো অনেক ঘাঁটি রয়েছে। এর মধ্যে ব্রিটেনে ২৫টি, ইতালিতে ৪৪টি ও স্পেনে রয়েছে ৪টি ঘাঁটি। রিসেপ তায়েপ এরদোয়ানের দেশ তুরস্কেও বেশ কয়েকটি মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাঁটি রয়েছে কুয়েত ও সৌদি আরবে। দেশ দুটিতে ১০টি করে মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে।
তবে সবচেয়ে বড় ঘাঁটিটি রয়েছে কাতারের দোহায়। ওই ঘাঁটিতে সার্বক্ষণিক ১১ হাজার মার্কিন সেনা অবস্থানের পাশাপাশি অসংখ্য ড্রোন ও প্রায় ১০০টি যুদ্ধবিমান রাখা হয়। এ ছাড়া আঞ্চলিক মানচিত্রের দিকে তাকালে ইরানের দুই পাশে মার্কিন বাহিনীর অন্তত ১৯টি ঘাঁটি একদম সহজেই চোখে পড়বে। এসব ঘাঁটির জন্য মার্কিনিদের প্রয়োজন পড়েছে ৮ লাখ ৪৫ হাজার ৪১১টি ভবন এবং তিন কোটি একর ভূমি। সে হিসাবে পেন্টাগন হচ্ছে, বিশ্বের অন্যতম প্রধান ভূমি-মালিক। বলার অপেক্ষা রাখে না এসব সামরিক ঘাঁটির মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে একচেটিয়া কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করাই আমেরিকার বড় লক্ষ্য।