বাংলাদেশ
মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের গৌরবময় অবদান

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকা ছিল সাহসিকতা, আত্মত্যাগ এবং জাতির প্রতি অগাধ ভালোবাসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দেশ মাতৃকার স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামে বীর সেনানীদের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরাও তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছেন অকুণ্ঠভাবে।
স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের কালরাত্রিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ঢাকা শহরে গণহত্যা শুরু করে। সেই রাতে ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইনে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা অস্ত্রের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও পাক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তাদের এই আত্মত্যাগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অনন্য সাহসিকতার প্রতীক হয়ে আছে।
পরে দেশব্যাপী অনেক পুলিশ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধের ময়দানে অংশগ্রহণ করেন। তারা শুধু প্রশাসনিক নয়, সক্রিয়ভাবে সামরিক প্রতিরোধেও ভূমিকা রেখেছেন। অনেকে গেরিলা আক্রমণে অংশ নেন, অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণে সাধারণ জনগণকে সহায়তা করেন।
তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১২০০ জন পুলিশ সদস্য শহীদ হন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে। তাঁদের অনেকেই বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন, আবার অনেককে বন্দি করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই আত্মত্যাগ জাতির জন্য ছিল অমূল্য, আর ইতিহাসে তারা স্থান করে নিয়েছেন বীর হিসেবে।
স্বাধীনতার পরে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পুলিশের এই অবদানকে স্বীকৃতি দেন। তাঁদের স্মরণে রাজারবাগে গড়ে তোলা হয়েছে ‘পুলিশ স্মৃতিস্তম্ভ’। প্রতিবছর ২৫ মার্চ এই দিনটিকে ‘জাতীয় গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয় এবং পুলিশ বাহিনী তাঁদের শহীদ সহকর্মীদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।