অপরাধ
দেশে মব সন্ত্রাসে নিহত ৮৭, আহত ২৬৬ – উদ্বেগ বাড়ছে গণপিটুনিতে

পরিক্রমা ডেস্ক:
চলতি আগস্ট মাসের প্রথম ১০ দিনেই সারা দেশে অন্তত ১৩টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ৯ জন, আহত হয়েছেন ১৩ জন। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএফএস) তথ্যমতে, জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত নিহত ছিলেন ৭৮ জন। আগস্টের ঘটনা যোগ করলে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৭। আহত হয়েছেন মোট ২৬৬ জন।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাবে, ১ জানুয়ারি থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত মব সন্ত্রাসে নিহত হয়েছেন অন্তত ১১১ জন। এসব ঘটনার মধ্যে বেশিরভাগই চোর সন্দেহে সংঘটিত। সর্বশেষ ৯ আগস্ট রংপুরের তারাগঞ্জে ভ্যানচোর সন্দেহে জামাই-শ্বশুর রূপলাল দাস ও প্রদীপ দাসকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। একই দিন মাদারীপুরে চোর সন্দেহে তিনজনকে গণপিটুনি দিয়ে একজনের চোখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাজ্জাদ সিদ্দিকী বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি বাড়লে মানুষ নিজের হাতে বিচার নিতে শুরু করে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সুযোগে তাৎক্ষণিক ও সংঘবদ্ধ মব হামলা বেড়েছে, যার মধ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও রয়েছে।
মানবাধিকারকর্মীদের মতে, গণপিটুনি ও মব সহিংসতা দমনে সরকারের দৃশ্যমান ও কার্যকর পদক্ষেপ নেই। গুম তদন্ত কমিশনের সদস্য নূর খান লিটন বলেন, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও মব-ভীতি পরিস্থিতি জটিল করছে। পুলিশ অনেক ক্ষেত্রে সাহস পাচ্ছে না, আদালতও দ্বিধায় রয়েছে।
ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি)-এর ‘পালস সার্ভে ৩’ অনুযায়ী, মব সহিংসতা নিয়ে উদ্বিগ্ন মানুষের হার ৮০ শতাংশ। নারীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ ৫৬ শতাংশ, রাতে চলাচলের নিরাপত্তা নিয়ে ৬১ শতাংশ এবং পোশাকজনিত হয়রানি নিয়ে উদ্বিগ্ন ৬৭ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সহিংসতার লাগাম টানতে হলে বিচার প্রক্রিয়ায় দ্রুততা, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং পুলিশি মনোবল পুনর্গঠন অপরিহার্য।