অপরাধ
পল্লবীতে নারী হত্যার মামলায় আসামি ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ আসলাম

রাজধানীর পল্লবী থানাধীন বাউনিয়া বাঁধ এলাকায় ফারজানা নামের এক নারী হত্যাকাণ্ডে ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ আসলাম গাজীকে আসামি করে মামলা করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার। তাদের দাবি, সাভার থেকে ওই গর্ভবতী নারীকে অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে আসলাম।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) হত্যা মামলা করেন ভুক্তভোগীর ভাই মো. রকি। মামলায় আসলাম ছাড়াও ১৩ জন নামীয় ও ১২ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, আসলামের নির্দেশেই সাভার থেকে গর্ভবতী ও এক সন্তানের জননী ফরজানাকে অপহরণ করে এনে পল্লবীর বাউনিয়াবাদ এলাকার একটি বাসায় আটকে রাখা হয়। সেখানেই দুই দিন ধরে চলতে থাকে পাশবিক নির্যাতন। যার পরিণতিতে ফরজানার মৃত্যু হয়।
পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল আলম কালের কণ্ঠেকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।তিনি বলেন, এ ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করা সম্ভব হয় নি। মামলাটির প্রাথমিক তদন্ত চলছে।
‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ আসলামের সংলিষ্টতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্তের স্বার্থে এখনই কোনো বিষয় বলা যাচ্ছে না।
আসলাম গাজীর অপরাধচক্র—
আসলাম গাজী বহু বছর ধরেই বিভিন্ন অপরাধে জড়িত।তার বিরুদ্ধে রয়েছে চাঁদাবাজি, জমি দখল, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা এবং খুনের অভিযোগ। ফরজানার হত্যাকাণ্ড তার অপরাধচক্রের আরো একটি অধ্যায়।
রাজধানীর মিরপুরের পল্লবী ও আশেপাশের এলাকায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত নাম আসলাম গাজী। পল্লবীর চাঞ্চল্যকর রফিক হত্যার সঙ্গেও তার সংশ্লিষ্টতার কথা শোনা যায়, তবে অদৃশ্য শক্তির কারণে মামলায় তার নাম আসে নি। আসলাম জমি দখল, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে।স্থানীয়দের মতে, প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় তিনি গড়ে তুলেছে একটি অপরাধ সাম্রাজ্য।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ওই নারী একটি বেসরকারি এনজিওতে কাজ করতেন। অধিক মুনাফার আশায় অনেকেই সেখানে টাকা জমা দিতেন। আর্থিক লেনদেন জটিলতা থেকে প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিবাদের সৃষ্টি হয়।
আসলাম গাজীর অপরাধ জগতের উত্থান—
আসলাম গাজীর উত্থান শুরু হয় নব্বই দশকের শেষ দিকে। তখন তিনি ছিলেন একজন স্থানীয় মাস্তান, মিরপুর-১১ নম্বর সেকশনের কয়েকটি পকেট এলাকায় চাঁদাবাজি করত। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি সংগঠিত করে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ। গ্যাংটির প্রধান কাজ ছিল জমি দখল, ভবন নির্মাণে চাঁদা আদায়, এবং প্রতিপক্ষকে হুমকি দেওয়া।
সূত্র মতে, ওই এলাকায় জমি বা ফ্ল্যাট কেনাবেচার ক্ষেত্রে তাকে চাদা দিতে হয়। অথবা আসলাম গাজীর নিয়ন্ত্রণে থাকা দালালদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়। বর্তমানে তার একাধিক বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আসলাম গাজী বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকেছে। ফলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও, বেশিরভাগ সময়েই আইনের আওতায় আনা যায়নি।