আন্তর্জাতিক
গাজায় পরিবারকে বাঁচাতে ‘শক্ত হয়ে উঠছে’ ১২ বছরের জানা

গাজার ধ্বংসস্তূপের ভেতর দিয়ে প্রতিদিন খাবার ও পানি সংগ্রহের যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ১২ বছরের এক কিশোরী, জানা মোহাম্মদ। গোলাপী সোয়েটার পরা এই মেয়েটি দুই হাতে ভারী পানিভর্তি বালতি বহন করে ফিরছে বাড়ির পথে – কারণ তার পরিবারের দায়িত্ব এখন তার কাঁধে।
উত্তর গাজার একটি পানিবন্টন কেন্দ্রে সিএনএনকে জানা জানায়, “আমি চাই না আমার বাবা আরও কষ্ট পাক। এজন্যই আমি শক্ত হচ্ছি। আমি সবসময় শক্ত থাকতে চাই।” তার বাবা বৃদ্ধ ও হৃদরোগে আক্রান্ত, মা-ও অসুস্থ। একমাত্র বড় ভাই এক বছর আগে ইসরাইলি স্নাইপারের গুলিতে নিহত হওয়ার পর থেকেই পরিবারটির দায়িত্ব জানার ওপর এসে পড়ে।
জানা যখন ভারী বালতি বহন করে বাড়ি ফিরছিল, তখন তার আঙুল সাদা হয়ে গিয়েছিল ভারের চাপে। তবু সে থেমে যায়নি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার জেরে ইসরাইল গাজায় ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু করে। এরপর থেকেই খাদ্য ও পানির সংকট তীব্রতর হয়। ১১ সপ্তাহ আগে ইসরাইল গাজায় সকল আন্তর্জাতিক সাহায্য প্রবেশ বন্ধ করে দেয়, যা পরিস্থিতিকে চরম মানবিক সংকটে পরিণত করেছে।
জাতিসংঘ-সমর্থিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার প্রতি পাঁচজনে একজন এখন অনাহারে ভুগছে। ২১ লাখ মানুষের এই অঞ্চলে পরিস্থিতি মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষের কাছাকাছি।
ইসরাইল বলছে, হামাসকে জিম্মি মুক্তির জন্য চাপ দিতেই তারা অবরোধ কঠোর করেছে। তবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ইসরাইলের বিরুদ্ধে “অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের” অভিযোগ তুলেছে।
ইসরাইল আংশিকভাবে কিছু খাদ্য সরবরাহের অনুমতি দিলেও তা অত্যন্ত সীমিত। সোমবার গাজায় মাত্র ৫টি ট্রাক প্রবেশ করে, যেখানে প্রতিদিন প্রয়োজন অন্তত ৫০০টি। জাতিসংঘের সাহায্য প্রধান টম ফ্লেচার একে ‘প্রয়োজনের সমুদ্রে এক ফোঁটা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
গাজার শিশুদের জন্য এই যুদ্ধ কেবল বোমা আর ধ্বংসের নয়, বরং প্রতিদিন বেঁচে থাকার এক কঠিন সংগ্রাম। জানা মোহাম্মদের মতো হাজারো শিশুর সংগ্রাম সেই নিষ্ঠুর বাস্তবতারই প্রতিচ্ছবি।