বাংলাদেশ
দখল-দূষণে রূপ হারিয়েছে বুড়িগঙ্গা, দোষীদের শাস্তির দাবি জনসাধারণের

ঢাকা, ২১ মে ২০২৫:
দখল ও দূষণের ভয়াবহতায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে বুড়িগঙ্গা নদী। এক সময়ের স্বচ্ছ জলরাশি আজ পরিণত হয়েছে কুচকুচে কালো পানিতে, যেখানে ভেসে বেড়ায় ময়লার ভেলা আর দুর্গন্ধে টেকা দায়। নদীর নিচের ১৫ ফিট গভীর পর্যন্ত জমে থাকা প্লাস্টিক বর্জ্যই প্রমাণ করে কতটা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে দূষণ।
ঢাকার সদরঘাট, ওয়াইজঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় সুয়ারেজ লাইনের মাধ্যমে প্রতিনিয়তই নদীতে ফেলা হচ্ছে অপরিশোধিত পয়োবর্জ্য। এক সময় স্থানীয়দের মিঠা পানির প্রধান উৎস এই নদী, আজ সেখানে মাছ তো দূরের কথা, পোকামাকড়ও দেখা যায় না।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “নদীর পানি এক সময় এত পরিষ্কার ছিল, বড় বড় মাছ পাওয়া যেত। এখন তো শুধু বোতল, শিশি আর দুর্গন্ধ।”
বুড়িগঙ্গায় মাঝিদের নৌকা আর জাল এখন জায়গা করে দিয়েছে হোটেল, দোকান ও বাজারের ফেলা পচা সবজি, ফল ও প্লাস্টিক আবর্জনায়। নদীর গভীরতা ও প্রশস্ততাও দিন দিন কমছে, কমছে পানির প্রবাহ। এই দখল ও দূষণের পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবৈধ বর্জ্য ফেলা।
পরিবেশবিদ অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার জানান, “আমরা বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীর বিভিন্ন স্থানে ১৫ ফিট গভীরে প্লাস্টিকের স্তর পেয়েছি। শুষ্ক মৌসুমে নদীতে প্রাণের অস্তিত্ব টিকে থাকার মতো পরিবেশও থাকে না।”
২০২৩ সালে বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিশন বুড়িগঙ্গার দখল ও দূষণের জন্য প্রায় ২৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে দায়ী করে। কিন্তু বাস্তবে কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন আসেনি।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী এম আতিকুর রহমান বলেন, “আইন করলেই হবে না, প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। নদী রক্ষা কমিশনের কাজের অগ্রগতি রাষ্ট্রীয়ভাবে মূল্যায়ন করা জরুরি।”
জনসাধারণের দাবি, পয়োবর্জ্য ও রাসায়নিক বর্জ্য যেন কোনোভাবেই নদীতে ফেলা না হয়, তা কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে যারা অবৈধভাবে ময়লা ফেলে ও দখলে যুক্ত, তাদের দ্রুত চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।