অপরাধ
তিয়ানশি’র নামে চট্টগ্রামে অর্ধকোটি টাকার প্রতারণা!‘ব্রোঞ্জ লায়ন’ রাশেদুল হাসানের

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বব্যাপী ২২০টিরও বেশি দেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী চীনা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি তিয়ানশি (TIENS Group) বাংলাদেশে ২০০৪ সাল থেকে স্বাস্থ্যপণ্য ও নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসায় সফলভাবে কাজ করে আসছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামে কোম্পানির ব্রাঞ্চ অফিসকে ঘিরে এক ভয়াবহ আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ উঠে এসেছে।
এক ভদ্রলোককে সেভেন স্টার বানাইয়া তার থেকে ২৬ লাখ টাকা হাতায় তার ভিতরে মাত্র 700 ডলারের প্রোডাক্ট তাকে দেওয়া হয়েছে এর জন্য বর্তমানে চট্টগ্রাম কোটে একটা মামলা চলমান
ভুক্তভোগী সৌদি আরব প্রবাসী সে এখন সৌদি আরবে কর্মরত আছেন
অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন চট্টগ্রাম অফিসের ‘ব্রোঞ্জ লায়ন’ পদমর্যাদাধারী মোঃ রাশেদুল হাসান শান্ত। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, শান্ত গত তিন বছরে ভুয়া প্রতিশ্রুতি, উপহার প্রলোভন ও পিভি জালিয়াতির মাধ্যমে অর্ধ কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
প্রতারনার কৌশল:
শান্তর প্রতারণার ধরন ছিল অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও পরিকল্পিত। তিনি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জনে শাড়ি, পাঞ্জাবি ও বিভিন্ন উপহারসামগ্রী দিতেন। এরপর মাসিক লাভ ও উচ্চ পজিশনের লোভ দেখিয়ে বিনিয়োগে প্ররোচিত করতেন।
একাধিক অভিযোগে দেখা গেছে:
• একই আইডি নম্বর ব্যবহার করে ভিন্ন সময় ও ভিন্ন ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থ নেওয়া হয়েছে, অথচ তাদেরকে প্রোডাক্ট বা পিভি কিছুই দেওয়া হয়নি।
• এক ভদ্রমহিলার টিম থেকে প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা নেওয়া হলেও আইডিতে পিভি দেওয়া হয়েছে মাত্র ৭০০০।
• এক মসজিদের ইমামের কাছ থেকে সাড়ে আট লাখ টাকা নেওয়া হলেও তাকে কোনো প্রোডাক্ট দেওয়া হয়নি।
• একাধিক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ২ লক্ষ ৭০ হাজার ও ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা আদায় করা হলেও তাদেরকে পিভি বা প্রোডাক্ট প্রদান করা হয়নি।
পদমর্যাদার অপব্যবহার ও পিভি জালিয়াতি:
যদিও শান্ত ‘ব্রোঞ্জ লায়ন’, তিনি নিজেকে বিভিন্ন জায়গায় ‘গোল্ড লায়ন’ বলে পরিচয় দিতেন। অভিযোগ রয়েছে, প্রতি মাসে চার-পাঁচ লাখ টাকা ইনকাম করেও তিনি মাত্র ১২০০ পিভি জমা দেখিয়ে কোম্পানির সাথে প্রতারণা করেছেন।
ডাউনলাইনের উপর নির্যাতন:
শান্ত শুধু অর্থ নয়, বরং তার ডাউনলাইনের লোকজনকে কেটে নিয়ে অন্য লাইনে যুক্ত করে দেয়ার মতো গুরুতর অসদাচরণ করেছেন, যা নেটওয়ার্ক মার্কেটিংয়ের নীতিমালার চরম লঙ্ঘন।
চট্টগ্রাম অফিসের নিরবতা:
চট্টগ্রাম অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরমান সাহেব বলেন, “আমার কাছে একবার একটি অভিযোগ এসেছিল, আমি নিজের উদ্যোগে সমাধান করেছি। এখন বড় কিছু হয়ে থাকলে, সেটা হেড অফিস জানবে।”
হেড অফিসের অবস্থান:
ঢাকা হেড অফিস থেকে জানানো হয়েছে, তারা এক মাস সময় নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তবে প্রশ্ন উঠছে, অতীতে যেভাবে তিয়ানশি বিতর্কিত ডিস্ট্রিবিউটরদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে, সেই ধারাবাহিকতায় এখন শান্তর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে বিলম্ব কেন?
বিশ্লেষকদের মতামত:
অর্থনীতিবিদদের মতে, আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের আড়ালে এভাবে প্রতারণা চলতে থাকলে, তা শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং দেশের অর্থনৈতিক পরিবেশ ও বৈদেশিক ব্র্যান্ডের প্রতি সাধারণ জনগণের আস্থার উপর বড় ধাক্কা দেবে।
এক ভুক্তভোগীর কথায়:
“শান্ত শুধু আমাদের টাকাই নেয়নি, সে আমাদের বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কোম্পানি কি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে, নাকি চোখ বন্ধ করে আছে?”
উপসংহার:
তিয়ানশির মতো একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের উচিত, দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে অপরাধীকে চিহ্নিত করা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। শুধু কোম্পানির ভাবমূর্তি রক্ষা নয়, এটি হবে ভুক্তভোগীদের প্রতি তাদের নৈতিক দায়বদ্ধতা পূরণের অংশ।