Connect with us

আন্তর্জাতিক

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে বহু শিক্ষার্থী গ্রেফতার

Published

on

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ থেকে আটক কয়েকজন। ছবি: সংগৃহীত

নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অন্যতম বড় ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কয়েক ডজন শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গ্রন্থাগার বাটলার লাইব্রের একটি অংশ দখল নেওয়ার পর এই অভিযান চালানো হয়।

বৃহস্পতিবার (৮ মে) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, লাইব্রেরির দ্বিতীয় তলার প্রধান পাঠকক্ষ দখল করে রাখা ৪০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থীকে প্লাস্টিকের হ্যান্ডকাফে বেঁধে পুলিশের ভ্যানে তুলে নেওয়া হয়েছে। নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগ (এনওয়াইপিডি) জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে অনেকেই পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থী।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আহ্বানে পুলিশ ক্যাম্পাসে অভিযান চালায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের কর্মকাণ্ডকে ‘অনধিকার প্রবেশ’ বলে বর্ণনা করেছে।

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে দেখা যায়, মুখে মাস্ক পরা বিক্ষোভকারীরা টেবিলের ওপর দাঁড়িয়ে, ড্রাম বাজিয়ে ‘স্ট্রাইক ফর গাজা’’ এবং ‘লিবারেটেট জোন’ লেখা ব্যানার প্রদর্শন করছেন। এসব দৃশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের লরেন্স এ. ওয়েইন রিডিং রুমে ধারণ করা হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কলম্বিয়ার এই বিক্ষোভের নিন্দা জানিয়ে বলেন, এতে ইহুদিবিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ইহুদি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।

তবে প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, ট্রাম্প ও অন্যান্য ডানপন্থি রাজনীতিকরা ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনকে অন্যায়ভাবে ইহুদিবিদ্বেষের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই বিক্ষোভের নেতৃত্বে রয়েছেন এমন অনেক শিক্ষার্থী নিজেরাও ইহুদি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় রয়েছে, কারণ প্রশাসন মার্চ মাসে কলম্বিয়ার বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য নির্ধারিত কয়েকশো মিলিয়ন ডলারের অনুদান বাতিল করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, তারা ক্যাম্পাসে ইহুদিবিদ্বেষ ও অন্যান্য বৈষম্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং একই সঙ্গে একাডেমিক স্বাধীনতার ওপর সরকারের হস্তক্ষেপ প্রতিহত করার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে।

বুধবার রাতে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ‘বিল্ডিং সুরক্ষিত করতে’ তারা এনওয়াইপিডির সহায়তা চেয়েছিল। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই জন নিরাপত্তা কর্মী আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়।

বিক্ষোভের সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ লাইব্রেরির মূল ফটক বন্ধ করে দিলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। একজন শিক্ষার্থী আহত হন এবং আরেকজনকে স্ট্রেচারে করে বাইরে নিয়ে যেতে দেখা যায়।

লাইব্রেরিতে প্রবেশে বাধা দেওয়া হলে ক্যাম্পাসের গেটের বাইরের সড়কে বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

বিক্ষোভকারী সংগঠন কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি অ্যাপারথেইড ডিভেস্ট জানিয়েছে, নিরাপত্তা কর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর বলপ্রয়োগ করেছেন এবং অনেক বিক্ষোভকারী তাদের পরিচয়পত্র দেখাতে অস্বীকৃতি জানান।

সংগঠনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪.৮ বিলিয়ন ডলারের তহবিল থেকে অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ও ইসরাইলি সামরিক দখলদারিত্বকে সহায়তাকারী কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ বাতিলের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে।

এর আগে সোমবার ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়েও ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীরা একটি ভবন দখল করেন। তাদের দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয় যেন ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে চুক্তি থাকা বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। সেখান থেকে ৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয় এবং ২১ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বরখাস্ত করে ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

২০২৩ সালে গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরাইলবিরোধী ও ফিলিস্তিনপন্থি ছাত্র আন্দোলনের যে ঢেউ দেখা গিয়েছিল, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছিল তার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করা কিছু ফিলিস্তিনপন্থি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে দেশছাড়া করার উদ্যোগ নিয়েছেন, তাদের উপস্থিতি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির জন্য হুমকি হতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন।

লাইব্রেরি দখল করা শিক্ষার্থীরা মাহমুদ খলিল নামক এক ফিলিস্তিনি কর্মীর মুক্তির দাবিও জানিয়েছে। তিনি কলম্বিয়ার একজন গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী এবং বর্তমানে লুইজিয়ানার একটি অভিবাসী বন্দিশিবিরে আটক রয়েছেন। তাকে প্রথম দিকে আটক করা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

Share

নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অন্যতম বড় ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কয়েক ডজন শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গ্রন্থাগার বাটলার লাইব্রের একটি অংশ দখল নেওয়ার পর এই অভিযান চালানো হয়।

বৃহস্পতিবার (৮ মে) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, লাইব্রেরির দ্বিতীয় তলার প্রধান পাঠকক্ষ দখল করে রাখা ৪০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থীকে প্লাস্টিকের হ্যান্ডকাফে বেঁধে পুলিশের ভ্যানে তুলে নেওয়া হয়েছে। নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগ (এনওয়াইপিডি) জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে অনেকেই পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থী।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আহ্বানে পুলিশ ক্যাম্পাসে অভিযান চালায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের কর্মকাণ্ডকে ‘অনধিকার প্রবেশ’ বলে বর্ণনা করেছে।

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে দেখা যায়, মুখে মাস্ক পরা বিক্ষোভকারীরা টেবিলের ওপর দাঁড়িয়ে, ড্রাম বাজিয়ে ‘স্ট্রাইক ফর গাজা’’ এবং ‘লিবারেটেট জোন’ লেখা ব্যানার প্রদর্শন করছেন। এসব দৃশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের লরেন্স এ. ওয়েইন রিডিং রুমে ধারণ করা হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কলম্বিয়ার এই বিক্ষোভের নিন্দা জানিয়ে বলেন, এতে ইহুদিবিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ইহুদি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।

তবে প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, ট্রাম্প ও অন্যান্য ডানপন্থি রাজনীতিকরা ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনকে অন্যায়ভাবে ইহুদিবিদ্বেষের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই বিক্ষোভের নেতৃত্বে রয়েছেন এমন অনেক শিক্ষার্থী নিজেরাও ইহুদি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় রয়েছে, কারণ প্রশাসন মার্চ মাসে কলম্বিয়ার বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য নির্ধারিত কয়েকশো মিলিয়ন ডলারের অনুদান বাতিল করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, তারা ক্যাম্পাসে ইহুদিবিদ্বেষ ও অন্যান্য বৈষম্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং একই সঙ্গে একাডেমিক স্বাধীনতার ওপর সরকারের হস্তক্ষেপ প্রতিহত করার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে।

বুধবার রাতে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ‘বিল্ডিং সুরক্ষিত করতে’ তারা এনওয়াইপিডির সহায়তা চেয়েছিল। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই জন নিরাপত্তা কর্মী আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়।

বিক্ষোভের সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ লাইব্রেরির মূল ফটক বন্ধ করে দিলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। একজন শিক্ষার্থী আহত হন এবং আরেকজনকে স্ট্রেচারে করে বাইরে নিয়ে যেতে দেখা যায়।

লাইব্রেরিতে প্রবেশে বাধা দেওয়া হলে ক্যাম্পাসের গেটের বাইরের সড়কে বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

বিক্ষোভকারী সংগঠন কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি অ্যাপারথেইড ডিভেস্ট জানিয়েছে, নিরাপত্তা কর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর বলপ্রয়োগ করেছেন এবং অনেক বিক্ষোভকারী তাদের পরিচয়পত্র দেখাতে অস্বীকৃতি জানান।

সংগঠনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪.৮ বিলিয়ন ডলারের তহবিল থেকে অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ও ইসরাইলি সামরিক দখলদারিত্বকে সহায়তাকারী কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ বাতিলের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে।

এর আগে সোমবার ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়েও ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীরা একটি ভবন দখল করেন। তাদের দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয় যেন ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে চুক্তি থাকা বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। সেখান থেকে ৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয় এবং ২১ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বরখাস্ত করে ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

২০২৩ সালে গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরাইলবিরোধী ও ফিলিস্তিনপন্থি ছাত্র আন্দোলনের যে ঢেউ দেখা গিয়েছিল, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছিল তার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করা কিছু ফিলিস্তিনপন্থি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে দেশছাড়া করার উদ্যোগ নিয়েছেন, তাদের উপস্থিতি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির জন্য হুমকি হতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন।

লাইব্রেরি দখল করা শিক্ষার্থীরা মাহমুদ খলিল নামক এক ফিলিস্তিনি কর্মীর মুক্তির দাবিও জানিয়েছে। তিনি কলম্বিয়ার একজন গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী এবং বর্তমানে লুইজিয়ানার একটি অভিবাসী বন্দিশিবিরে আটক রয়েছেন। তাকে প্রথম দিকে আটক করা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

Share