বাংলাদেশ
৪৩তম বিসিএস নন-ক্যাডার: বিধি সংশোধন বিলম্বে সুপারিশ কার্যক্রম

বিসিএস-উত্তীর্ণ মেধাবী প্রার্থীদের মধ্য থেকে নন-ক্যাডার নিয়োগ দীর্ঘদিন ধরে একটি স্বচ্ছ ও সময়োপযোগী প্রক্রিয়া হিসেবে স্বীকৃত। সেই ধারাবাহিকতায় ৪৩তম বিসিএস নন-ক্যাডার উত্তীর্ণদের নিয়োগের লক্ষ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত প্রায় ৯ হাজার শূন্যপদের অধিযাচন গত ৭ই মে সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি)-এ পাঠায়। কিন্তু “নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ (বিশেষ) বিধিমালা-২০২৩” সংশোধনের প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ায় সেই সুপারিশ কার্যক্রম এখনো থমকে আছে।
৪৩তম বিসিএসের ভাইভা উত্তীর্ণ হাজার হাজার মেধাবী প্রার্থী অপেক্ষায় থাকলেও বিধি সংশোধন ছাড়া সুপারিশ প্রক্রিয়া শুরু করা কমিশনের পক্ষে সম্ভব নয়। জানা গেছে, বিপিএসসি ২২শে মে সংশোধিত বিধির প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়; বর্তমানে তা প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ে রয়েছে। অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত কমিশন আইনি ও নীতিগত জটিলতার কারণে নন-ক্যাডার পদে সুপারিশ করতে পারছে না।
এদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, যুব উন্নয়ন, সমাজকল্যাণ, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, অর্থ, পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং নির্বাচন কমিশনসহ একাধিক সংস্থা গুরুতর জনবল সংকটে রয়েছে। শূন্য পদ পূরণের জন্য অধিযাচন পাঠানো হলেও সুপারিশ আটকে থাকায় নিয়োগ কার্যক্রম স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। কিছু সংস্থা নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে, যা সরকারের ‘দ্রুত নিয়োগ’ নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ৪৩তম বিসিএসের ভাইভা উত্তীর্ণ প্রার্থীরা ইতোমধ্যে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় এখান থেকেই সরাসরি সুপারিশ করলে নতুন পরীক্ষা ছাড়াই স্বল্প সময়ে দক্ষ জনবল নিয়োগ সম্ভব। এতে সময়, ব্যয় ও প্রশাসনিক জটিলতা—সবই কমবে; পাশাপাশি নিয়োগে স্বচ্ছতা রক্ষা এবং সরকারের রাজস্ব সাশ্রয় হবে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব জনবল প্রয়োজন, যা ৪৩তম বিসিএস নন-ক্যাডার তালিকা থেকে দ্রুত সুপারিশ করলে সহজেই পূরণ করা যাবে। শুধু নির্বাচন কমিশন নয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিপুল সংখ্যক শূন্যপদ থাকায় বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা দ্রুত প্রধান শিক্ষক নিয়োগের নির্দেশ দিলেও, ৪৩তম ও ৪৭তম বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে নিয়োগের লক্ষ্যে অধিযাচিত প্রধান শিক্ষকের প্রায় ২৩০০ পদ প্রত্যাহার করে আলাদা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে—যা প্রধান উপদেষ্টার দ্রুত নিয়োগের লক্ষ্যকেও বাধাগ্রস্ত করবে, কারণ একটি পূর্ণাঙ্গ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সাধারণত এক থেকে দেড় বছর সময় লাগে। অথচ প্রধান শিক্ষক পদটি বর্তমানে ১০ম গ্রেডে উন্নীত হওয়ায়, ভাইভা উত্তীর্ণ কিন্তু পদস্বল্পতার কারণে ক্যাডারবঞ্চিত মেধাবীদের মধ্য থেকেই নিয়োগ করলে দ্রুত জনবল পাওয়া সম্ভব হবে এবং শিক্ষার মানোন্নয়নে তা সার্থক ভূমিকা রাখবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই প্রক্রিয়া বিলম্বিত হলে তা কেবল প্রশাসনিক ক্ষতিই করবে না; বরং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও বিপ্লবের চেতনার সাথেও সাংঘর্ষিক হতে পারে। জনগণের প্রত্যাশা ছিল স্বচ্ছ ও দ্রুত নিয়োগের মাধ্যমে ন্যায্যতার প্রতিফলন—যা বর্তমানে বিধি সংশোধনের বিলম্বিত হওয়ায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকারের নীতিগত অগ্রাধিকার বাস্তবায়ন এবং দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটাতে দ্রুত বিধি সংশোধনের গেজেট প্রকাশ জরুরি। এতে বিপিএসসি ৪৩তম বিসিএস নন-ক্যাডার তালিকা থেকেই দ্রুত সুপারিশ কার্যক্রম শুরু করতে পারবে, যা বর্তমান সরকারের বেকারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়কে আরও গতিশীল করার মাধ্যমে জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করবে।