বাংলাদেশ
১৫ বছরেও হয়নি সংস্কার : রাস্তার বেহাল দশা, অল্প বৃষ্টিতেই হাঁটুপানি

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়নের সাবান ফ্যাক্টরি এলাকার সড়কটি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সংস্কারের কাজ বন্ধ হয়ে আছে। সড়কটিতে সামান্য বৃষ্টি হলেই হাঁটুপানি জমে তলিয়ে যায়। পুরো সড়কে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকার কারণে বৃষ্টির পানি, ড্রেনেজের ময়লা পানি সড়কে এসে জমা হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে এ সড়ক দিয়ে চলাচলরত পথচারী ও এলাকাবাসী।
এ সড়ক ধরে রয়েছে কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ সার্কেল রাজস্ব (ভূমি) অফিস।
সেখানে প্রতিদিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, অফিসার, শত শত ভূমি অফিসে সেবা প্রত্যাশীসহ কয়েক হাজার স্থানীয় লোকজন চলাচল করে থাকেন। এই সড়কের পাশে রয়েছে বড় বড় কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন তাদের মালামাল বহনের জন্য ব্যবহার হয় মালবাহী বড় বড় ট্রাক। সব মিলিযে সড়কটি চলাচলের জন্য গুরুত্ব অনেক।
দীর্ঘ ১০-১৫ বছর ধরে সড়কটি অবহেলায় পড়ে থাকার কারণেই সড়কের এই বেহাল দশা।
রবিবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ট্রাক, রিকশা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, সিএনজিসহ অন্যান্য যানবাহনসহ হাজার হাজার মানুষ চলাচল করছে এই সড়ক দিয়ে। স্থানীয়রা ময়লা পানিতে সাবধানে চলাচল করলেও অধিকাংশ মানুষ জানে না সড়কে জমে থাকা পানি ড্রেনেজের ময়লা পানি না বৃষ্টির পানি। তাই নিজের অজান্তেই নোংরা পানিতে নষ্ট হচ্ছে জামা-কাপড়সহ প্রিয় যানবাহন।
আর আশপাশের ব্যবসায়ীরা আছেন চরম ভোগান্তিতে। ভূমি অফিসে সেবা নিতে আসা সেবা গ্রহীতাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়, গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে। এ ছাড়া প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। সংস্কারের অভাবে সুয়ারেজ লাইনের ময়লা পানিতে হাঁটু সমান ডুবে থাকে সড়কটি।
অটোচালক মো. সেলিম মিয়া বলেন, এই সড়কটির অবস্থা খুবই খারাপ।
সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে খালে পরিণত হয়। তখন বুঝার উপায় নাই এটি সড়ক না খাল। তখন এ সড়ক দিয়ে অটো চালানো খুবই বিপৎজনক, কখন না জানি দুর্ঘটনা ঘটে যায়। কারণ পানির নিচে তো বুঝা যায় না কোন দিকে ভালো আর কোন দিকে ভাঙা। অনেক ঝুঁকি নিয়েই এই সড়কে অটো চালাতে হয়। এই সড়ক দিয়ে অটো চালালে প্রতিদিন অটোর চাকা লিক হয়ে যায়। এতে করে আমাদের সে দিন কাজ কাম কমে যায়। অটোর ভাড়া দিয়ে বাসায় নেওয়ার মতো টাকা পকেটে থাকে না। সরকার এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি অতি দ্রুত সংস্কার না করলে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
স্থানীয় মুদি ব্যবসায়ী মো. মজিদ মিয়া জানান, এই সড়কের পাশেই রয়েছে আমার মুদি দোকান। এই সড়কে পাশে আমার মতো আরো প্রায় দুই শতাধিক বিভিন্ন পণ্যের দোকান রয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই সড়কে হাঁটুপানি জমে থাকে, সঙ্গে জড়ো হয় ড্রেনেজের নোংরা পানি। সড়কে বৃষ্টি ও ড্রেনেজের নোংরা পানি জমে থাকার কারণে আমাদের দোকানের কাস্টমার কমে গেছে। এতে করে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তাছাড়া এ সড়ক দিয়ে স্কুল-কলেজ, মাদরাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থী, অফিস আদালতে কর্মরত অফিসার-কর্মচারী ও হাজার হাজার পথচারী প্রতিদিন যাতায়াত করে থাকে। তাদেরকেও পড়তে হয় ভোগান্তিতে। জরুরি ভিত্তিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাসহ সড়কটি সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় ষাটোর্ধ এক ব্যক্তি বলেন, এই সড়কের দুর্ভোগের কারণ হলো সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। তার কারণেই এই সড়কের বেহাল দশা। তার কথায় অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম এ কথার মানে কি কাকা? তিনি উত্তরে বলেন, এই সড়কের মাঝ পথে বিপু সাবের আবাসন প্রকল্প প্রিয় প্রাঙ্গন-১ রয়েছে। সেখানে তিনি সন্ত্রাসী বাহিনী প্রয়োগ করে কম দামে জমি ক্রয় করেছিলেন। অনেকের জমির টাকাও দেয় নাই। যদি এই সড়কটি সংস্কার করে সুন্দর করা হতো তাহলে ওই এলাকার জমিগুলোর দাম অনেক বেড়ে যেত। বিপু সাব তখন কম দামে জমি কিনতে পারতো না। তাই সড়কটির সংস্কারের কাজ প্রায় ১৫ বছর আগে শুরু হলেও বিপু সাবের ইশারায় আর শেষের মুখ দেখে নাই। আমি আশা করছি বর্তমান সরকার দেশের অনেক উন্নয়নের কাজ করছেন। আমাদের এই সড়কটি দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাসহ সংস্কার করে এলাকার জনগণকে একটু স্বস্তি ফিরিয়ে দেবে।
এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আরিফুর রহমানের মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি জানান, ময়লা-আবর্জনা দিয়ে ড্রেনের মুখ বন্ধ থাকায় পানি নিষ্কাশন না হওয়ার কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। ইতিমধ্যে ড্রেন পরিষ্কার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আর সড়কটি সংস্কারের বিষয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। এ সড়কটির সংস্কারের জন্য জেলা অফিস থেকে টেন্ডার করা হবে। টেন্ডার হয়ে গেলে খুব দ্রুতই সড়কটির সংস্কার কাজ শুরু হবে বলে আশা করছি।