বাংলাদেশ
তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত, মুক্তি পেলেন ভাইরাল হওয়া সেই ১০ নেতাকর্মী

গাজীপুর মহানগরের পোড়াবাড়ী এলাকায় ছাত্রদল ও যুবদলের ১০ নেতাকর্মীকে চাঁদাবাজির অভিযোগে কোমরে দড়ি বেঁধে থানায় আটকের ঘটনাটি সামাজিকমাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয় এবং বিভিন্ন সংবাদপত্রে ছাপা হয়; কিন্তু প্রকৃত বিষয়টি তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হলে রোববার রাতেই ছেড়ে দেওয়া হয় তাদের।
ঘটনাটি সোমবার সারা দিন ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। প্রকৃত ঘটনা হলো আটক হওয়া এবং ওই এনজিওর সাবেক ফিল্ড অফিসার মো. শাহীন মিয়ার রক্ষিত ১০ লাখ টাকার চেক আদায়ের ঘটনা। রাত সাড়ে ১০টার দিকে এক লিখিত আপসনামায় বাদী তা নিজেই স্বীকার করেছেন।
রোববার ঘটনার শুরুতে যৌথবাহিনীর সদস্যরা গাজীপুর মহানগরের হংকং ফিলিং স্টেশনের পাশে সৃজনী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির অফিসে গিয়ে শাখা ব্যবস্থাপক সোহেল রানার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি ও হত্যার হুমকির অভিযোগে ১০ জনকে আটক করা হয়। পরে জানা যায়, বিষয়টি ছিল এনজিওকর্মী শাহিন মিয়ার চাকরির সময় রক্ষিত চেক সংক্রান্ত।
এনজিও মালিক মহিবুল আলম পূর্বে তার কর্মী হিসেবে দায়িত্বে থাকা শাহিন মিয়ার কাছ থেকে সিকিউরিটি বাবদ একটি ব্ল্যাংক চেক নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে চাকরি ছাড়ার পর সেই চেকে ১০ লাখ টাকা বসিয়ে আদালতে মামলা করেন মহিবুল। বিষয়টি নিয়ে শাহিন মিয়া এক রাজনৈতিক আত্মীয়ের মাধ্যমে স্থানীয় ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাদের ডেকে সালিশি সভার আয়োজন করেন।
ঘটনাস্থলে সালিশ চলাকালে এনজিও মালিকের ভাই এক সেনা কর্মকর্তা, র্যাব ও যৌথবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে এসে কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ছাত্রদল যুবদলের ১০ জন নেতাকর্মীকে পুলিশে সোপর্দ করেন। পুলিশ আটককৃতদের কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে যাওয়ার একাধিক ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
তাৎক্ষণিক বিষয়টি চাঁদাবাজির অভিযোগ তোলা হলে তা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশ হয় এবং বিএনপি ও স্থানীয়দের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এছাড়াও দলীয়ভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চাপ দেয়া হয়। পরে তদন্তে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে থানা থেকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে আটককৃত সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এদিকে আপসনামায় বাদী মহিবুল আলম স্বীকার করেন, ঘটনাটি ছিল ‘ভুল বোঝাবুঝি’। বাদী মামলা প্রত্যাহার করবেন এবং আর কোনো হয়রানি করা হবে না মর্মে লিখিতভাবে অঙ্গীকার করেন।
এ বিষয়ে গাজীপুর মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব মাহমুদ হাসান রাজু বলেন, চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন। এটা রাজনৈতিকভাবে আমাদের নেতাকর্মীদের হেয় করা হয়েছে।
গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি রোহানুজ্জামান শুক্কুর বলেন, আমরা সালিশে মধ্যস্থতা করছিলাম মাত্র। বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি থেকে এমন জায়গায় পৌঁছায়। তবে শেষপর্যন্ত সত্য উদঘাটিত হয়েছে এবং আমাদের নেতাকর্মীদের মুক্তি মিলেছে।
গাজীপুর সদর মেট্রো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, তদন্তে চাঁদাবাজির কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই আটককৃতদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।