নিরাপত্তার কারণে বুধবার পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের গিলগিট ও স্কারদু শহরের নির্ধারিত সব বাণিজ্যিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, সতর্কতা হিসেবে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়ার কারণে নিজেদের আকাশসীমা সুরক্ষিত রাখতেই পাকিস্তান এসব পদক্ষেপ নিয়েছে।
গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের বেশির ভাগই পর্যটক। নয়াদিল্লির অভিযোগ, হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের যোগসূত্র রয়েছে। এই হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিন ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করেছে ভারত, যাঁদের দুজন পাকিস্তানি নাগরিক বলে দাবি করা হয়েছে; কিন্তু ভারতের এসব অভিযোগ জোরালোভাবে নাকচ করেছে পাকিস্তান। হামলার পর থেকে দেশ দুটি পরস্পরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এরপর থেকে উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলছে।

পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ায় পাকিস্তানের সব বিমানবন্দরেও সর্বোচ্চ সতর্কতায় জারি করা হয়েছে। বিমানবন্দরগুলোয় নিরাপত্তা ও নজরদারি ব্যবস্থাকে ব্যাপকভাবে জোরদার করেছে।
বিমান চলাচল–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ভারতে সাময়িক বিরতি (ট্রানজিট) নিয়ে, সরাসরি ভারত থেকে বা ভারতের আকাশপথ ব্যবহার করে যেসব বিদেশি এয়ারলাইনস পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করছে, সেগুলোর ওপর কঠোর নজরদারি শুরু হয়েছে।
অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের কার্যক্রম এখন আরও বেশি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, পেহেলগামের হামলার দুই দিন পর ভারতীয় সব এয়ারলাইনসের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয় পাকিস্তান।
লাহোরের আল্লামা ইকবাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশটির সব প্রধান বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, যেকোনো সন্দেহভাজন উড়োজাহাজের পাইলটদের কাছ থেকে উড্ডয়নের আগে এয়ার ডিফেন্স ক্লিয়ারেন্স নম্বর সংগ্রহ করতে হবে।
যথাযথ কাগজপত্র ও যাচাই–বাছাই ছাড়া কোনো উড়োজাহাজকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে না।
তা ছাড়া বিমানবন্দরের সব কর্মকর্তা ও বিভিন্ন বিভাগের কর্মীদের সার্বক্ষণিক বৈধ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উচ্চমাত্রার নিরাপত্তা সতর্কতার অংশ হিসেবে যাঁদের কাছে পরিচয়পত্র নেই, তাঁদের বিমানবন্দর এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
যেকোনো সম্ভাব্য জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত ও সমন্বিত জবাব নিশ্চিত করতে বিমানবন্দর নিরাপত্তা বাহিনী (এএসএফ), পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে কয়েকটি নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে বুধবার পিটিভি নিউজ ও রেডিও পাকিস্তান জানিয়েছে, নিয়ন্ত্রণরেখার (এলওসি) কাছাকাছি এলাকায় ভারতের চারটি রাফাল যুদ্ধবিমান টহল দিচ্ছিল। পাকিস্তান বিমানবাহিনীর (পিএএফ) পাল্টা পদক্ষেপের কারণে ভারতের যুদ্ধবিমানগুলো পিছু হটতে বাধ্য হয়। ২৯ ও ৩০ এপ্রিলের মধ্যবর্তী রাতে এ ঘটনা ঘটে।
পাকিস্তানের নিরাপত্তা সূত্রগুলোর দাবি, ভারতের যুদ্ধবিমানগুলো জম্মু ও কাশ্মীরে নিজেদের নিয়ন্ত্রিত আকাশসীমায় টহল দিচ্ছিল। পিএএফ তা শনাক্ত করে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। তবে পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনী এ বিষয়ে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিস্তারিত কিছু জানায়নি বলে ডনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।